23 May 2010
প্রাণবৈচিত্র্য: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
‘বিদেশী গাছে আমাদের দেশী প্রাণী বাঁচবে কী করে?’ ২২ মে আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্র আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এমেরিটাস কাজী জাকের হোসেন। ‘প্রাণবৈচিত্র্য: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ তৌহিদুল ইসলাম এবং ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট, বাংলাদেশের সুন্দরবন টাইগার প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার এডাম বারলো ও ক্রিস্টিনা গ্রীনউড।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি সেমিনার কক্ষে উক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় ড. কাজী জাকের হোসেন বলেন, একটি গাছের উপর নির্ভর করে ১০ ধরনের প্রাণী বেঁচে থাকে। তিনি বলেন, একাশিয়া, ইউক্যালিপটাস, মেহগনি ইত্যাদি বিদেশী গাছ বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, এগুলোর উপর নির্ভর করে আমাদের দেশী প্রাণীসমূহ বাঁচতে পারেনা। ড. হোসেন আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মাত্র ৮-৯% বনভূমি আছে এবং এ বনভূমির ৮০%-ই মেহগনি, সেগুন, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদির মনোকালচার ফরেস্ট। এসব মনোকালচার ফরেস্টে কেবল এক ধরনের গাছ লাগানো হয়, অন্য সমস্ত প্রজাতির গাছ ধ্বংস করা হয়। তদুপরি, বিদেশী গাছ হওয়ার দরুন এগুলো আমাদের দেশী প্রাণীর জন্য খাদ্যের যোগান দিতে পারেনা। এভাবে বিদেশী গাছ-নির্ভর মনোকালচার ফরেস্ট বাংলাদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী তথা বাংলাদেশের প্রাণবৈচিত্র্যেকে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করেছে। ড. হোসেন আরও বলেন, আমাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরায় ফিরে পাওয়া সম্ভব; এটি কোন অসাধ্য কাজ নয়। কোন একটি এলাকার পরিবেশকে আমরা যদি কোনভাবে স্পর্শ না করে ফেলে রাখি, তবে ধীরে ধীরে তা প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে পায়।
সুন্দরবন টাইগার প্রজেক্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এডাম বার্লো বলেন, বাঘের জীবনবৈচিত্র্য প্রাণবৈচিত্র্য এবং তার গত শতকের চেয়ে এই শতকে বাঘের পরিমাণ প্রায় সিংহভাগ হ্রাস পেয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশের সুন্দরবনের বাঘ ভারতের বা নেপালের বাঘের তুলনায় অনেক ছোট। তার সম্ভাব্য কারণ, বাংলাদেশে বাঘের জন্য যে শিকার পাওয়া যায়, অর্থাৎ চিত্রা হরিণ আকারে ছোট। অতএব, আমরা যদি ভাবি সুন্দরবনের বাঘ শেষ হয়ে গেলে অন্য জায়গা থেকে বাঘ এনে ছাড়া যাবে - সেটা ভুল হবে। এটা সম্ভব নয়; কারণ অন্য এলাকার বাঘ সুন্দরবনে বাঁচতে পারবে না; তা অন্য পরিবেশে বাস করতে অভ্যস্থ। ড. শেখ তৌহিদুল ইসলাম বাংলাদেশে প্রাণবৈচিত্র্য হ্রাসের উপর তার গবেষণালদ্ধ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য ২০০২ সালে পৃথিবীর ২০০ টি দেশের প্রতিনিধি জাতিসংঘের সাধারণ সভায় এক সিদ্ধান্তে ২০১০ সালকে আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য বর্ষ হিসেবে ঘোষনা করে। আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য বর্ষ ২০১০ উপলক্ষে দেশের বৃহত্তম বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্র যে বছর-ব্যাপী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, তার অংশ হিসেবে চক্র এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
04 May 2010
লুইজিয়ানা উপকূল - পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্য নাম
অ্যাডমিরাল ম্যারি ল্যান্ড্রি জানান(২৯ এপ্রিল,২০১০), এখন সাগরে প্রতিদিন পাঁচ হাজার ব্যারেল তেল (দুই লাখ ১০ হাজার গ্যালন) ছড়িয়ে পড়ছে। প্লাটফর্মটিতে তৃতীয় আরেকটি ছিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। এসব ছিদ্র দিয়ে সাগরে অনবরত চুয়ে পড়ছে তেল। ছিদ্রগুলো বন্ধ করতে রোবট ডুবোজাহাজ দিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তা সফল হচ্ছে না। নিঃসরণ অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন সাগরের বিস্তর এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়ছে। শেষ খবর অনুযায়ী প্রায় ৭৪ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তেল ছড়িয়েছে।
কানাডার তেলকূপ অগ্নিনির্বাপক কম্পানি 'সেফটি বস'র প্রধান মাইক মিলার বলছেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিতে পারে। কোস্টগার্ডের তথ্য অনুযায়ী, নিঃসরণ বন্ধ করা না গেলে আগামী দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এক কোটি ১০ লাখ গ্যালন তেল সাগরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা ১৯৮৯ সালের আলাস্কায় ইক্সন ভালদেজ তেল বিপর্যয়কেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
পরিবেশ রক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে এর আগে কোস্টগার্ড তেল ছড়িয়ে পড়া সাগরের কিছু অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়। কর্মকর্তারা বলছেন, মিসিসিপি নদীর পূর্ব দিকে তেল ছড়িয়ে পড়া সাগরের পৃষ্ঠে ৫০ কিলোমিটার এলাকায় 'নিয়ন্ত্রিত আগুন' ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে মাইক মিলার এ পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদি নয় বলে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, আসল বিষয় হচ্ছে, তেল ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে হবে।
পরিবেশবিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, সাগরে তেল ছড়িয়ে পড়ায় এর প্রভাবে উপকূলের আশপাশের বিভিন্ন প্রাণী বিষাক্ত গ্যাসের প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
লুইজিয়ানার গভর্নর ববি জিন্দাল পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারকে জরুরি সহায়তা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।