29 April 2010

বয়সী কিছু বটবৃক্ষের কথা

মল্লিকপুরের বিশ্ব বটগাছ [ঝিনাইদ]

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুইতলা মল্লিকপুর গ্রামের বটগাছটি যেন দিগন্ত ছুঁতে চায়। কালীগঞ্জ সদর থেকে পাকা রাস্তা মল্লিকপুর ছুঁয়েছে। ছয় কিলোমিটার গেলে চোখে পড়ে সবুজের পাহাড়। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে বিশ্ব বটগাছ। গাছটির বয়স কমপক্ষে ৩০০ বছর। বটগাছের পাশেই ছোট্ট বাজার। এই গাছের নিচে একসময় কুমারপল্লী ছিল।একসময় এখানে একটি কুয়া ছিল। এই কুয়ার মধ্যে গাছটি জন্মায়। বর্তমানে ৪ হেক্টর জায়গাজুড়ে গাছটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। একসময় গাছটির দুই হাজার ঝুরি ছিল। এখন কমে কয়েক শ হয়েছে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এর নিচে পূজা হয়। বন বিভাগের একজন কর্মী বিশ্ব বটগাছের পাহারাদার। এখানে জেলা পরিষদের একটি ডাকবাংলো রয়েছে।
(তথ্যসূত্র : ফখরে আলম, যশোর)

মিরপুরের অচিন বৃক্ষ

গাছটিকে সবাই বলে অচিন বৃক্ষ। অথচ যে কেউ দেখে বলতে পারবে, এটি একটি বটগাছ। চেনা গাছটির এমন নাম কেন হলো, তার সঠিক জবাব দিতে পারেনি কেউ।গাছের নিচে একটি সিমেন্টের ফলকে গাছটির বয়স ১৬৫ বছর লেখা। উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমীরা এর সমর্থন করেননি। তাঁদের ধারণা, এর বয়স ১০০ বছর বা কিছু কমবেশি।
কাছেই থাকে কয়েকটি হিন্দু পরিবার। তারা একে দেবতা মানে। পৌষসংক্রান্তির দিন এই গাছে বুড়াবুড়ির পূজা দেওয়া হয়। গাছের গুঁড়ির মধ্যখানে বুড়ির প্রতিমা রেখে খাবার, কবুতরসহ নানা সামগ্রী উৎসর্গ করে তারা।
বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে চটবাড়ি এলাকায় তুরাগ নদের পাড়ে গাছটির অবস্থান। মিরপুর এক নম্বর থেকে রিকশাওয়ালাকে চটবাড়ি বটতলা বললে সোজা সেখানে নিয়ে যাবে।
(তথ্যসূত্র : মোহাম্মদ আসাদ)

বটতলীর বটগাছ [আলুটিলা, খাগড়াছড়ি]

জনশ্রুতি রয়েছে, যিনি এ বটবৃক্ষের তলায় বসে ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগাবেন, তিনি শতবর্ষী হয়ে যাবেন। এ আশায় বটগাছের নিচে অনেকেই কিছু সময় কাটিয়ে সুখ অনুভব করেন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, স্বাধীনতার বছরেও তারা বাপ-দাদার কাছে শুনেছেন বটগাছটি শত বছর আগের। তখন ত্রিপুরা আদিবাসীরা বটগাছটি ঘিরে পূজা অর্চনা করত। মূল বটগাছটি থেকে নেমে আসা প্রতিটি ঝুরিমূল কালের পরিক্রমায় একেকটি নতুন বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। গাছটি থেকে এলাকার নাম হয়েছে বটতলী
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার আলুটিলায় এর অবস্থান। খাগড়াছড়ি জেলা সদরে পৌঁছার ২০ কিলোমিটার আগে মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর। সেখান থেকে আরো চার কিলোমিটার সামনে ১০ নম্বর হয়ে ট্যাক্সি বা নিজস্ব যানবাহনে বটতলী যেতে সময় লাগে ১৫ মিনিট।
(তথ্যসূত্র : মুহাম্মদ আবু দাউদ, খাগড়াছড়ি)

দেবালয়টেকের বটগাছ [নরসিংদী]

নরসিংদী সদর উপজেলার সোনর গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের মাঝে দেবালয়টেকে প্রায় তিন বিঘা জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি শতবর্ষী বটগাছ। গাছটির ঝুরিমূল থেকে সৃষ্টি হয়েছে আরো ২২টি বিভিন্ন আকারের বটগাছ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছটির পরিধিও বাড়ছে।
কথিত আছে, এই গাছে দেব-দেবী থাকে। কেউ গাছের কোনো অংশ কাটলে সে মারা যায়। গাছটির মালিকদের একজন নৃপেন্দ্র পাল বলেন, বহু আগে থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের ২ তারিখে এই গাছের তলে মেলা বসে।
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে প্রথমে যেতে হবে নরসিংদীর পাঁচদোনা বাসস্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ড থেকে সোনরে পৌছতে রিকশায় সময় লাগবে ১০ মিনিট। রিকশা থেকে নেমে মেঠো পথে দুই মিনিট হাঁটলেই আপনি পৌছে যাবেন দেবালয়টেকে।
(তথ্যসূত্র : সুমন বর্মণ, নরসিংদী)

11 April 2010

আন্তজার্তিক প্রাণবৈচিত্র্য বর্ষ ২০১০

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এর (৬১/২০৩) সভায় ২০১০ সালকে আন্তজার্তিক প্রাণবৈচিত্র্য বর্ষ ঘোষণা করা হয়। খুব সাধারণভাবে প্রাণবৈচিত্র্য বলতে আমাদের চারপাশের দৃশ্য, অদৃশ্য সকল প্রাণকে বুঝায় । মানুষের জীবন ধারণের জন্য খাদ্য থেকে দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার্য প্রত্যেকটি দ্রব্যের জন্য প্রাণবৈচিত্র্যের উপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। কিন্তু ক্রমবর্ধমান পরিবেশ দূষণের কারণে পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্যের একটি বিশাল অংশ আজ হুমকির মুখে। তাই এখন উচিত আমাদের যাবতীয় পরিবেশ দূষণ বন্ধ করা কিংবা বন্ধ করার জন্য সোচ্চার হওয়া।

আমারা প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় প্রত্যেকেই কিছু না কিছু ভূমিকা রাখতে পারি। অনুসন্ধিৎসু চক্র প্রাণবৈচিত্র্য বাঁচাতে সাধারণ কিছু কাজের তালিকা করেছে। প্রাণবৈচিত্র্য বাঁচাতে আমরা যে কেউ নিচের যে কোন একটি চর্চা শুরু করতে পারি আমাদের নিজেদের জীবনে। অনেকে হয়তো বলবেন ব্যক্তিগত এই চর্চা সমাজে কতটুকু পরিবর্তন আনতে পারবে। কিন্তু আমাদের এই চর্চা যে একদিন চারদিকে বিস্তার লাভ করবে না, তা কে বলতে পারে ? তাই এখনই শুরু করতে পারেন নিচের ন্যূনতম একটি অথবা একাধিক চর্চা। নিজের চর্চার পর তা পরিবারের অন্যদের চর্চার আহ্বান জানানো।

১. প্রাণবৈচিত্র্য কি তা জানা, পরিবারের সবাইকে জানানো; প্রতিবেশীদের, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের জানানো, কর্মস্থলে জানানো; কর্মস্থলে, সংগঠনে আলোচনা করা। যত বেশি মানুষকে সম্ভব, এটা জানানোর জন্য সচেষ্ট হওয়া ।

২. পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ব্যবহারে যথাসম্ভব মিতব্যয়ী হওয়া। অন্যদের আহ্বান জানানো।

৩. ঘর থেকে বের হওয়া মাত্রই বাতি নিভিয়ে ফেলা। যখন ঘরে থাকবেন না তখন যে সব বৈদ্যুতিক যন্ত্র আপনি ব্যবহার করছেন না, তা বন্ধ রাখা। কারণ এতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়।

৪. প্রত্যেক বাসায় নূন্যতম একটি এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করা। এ কাজে প্রয়োজনে অনুসন্ধিৎসু চক্রের সাথে যোগাযোগ করুন। একটি এনার্জি সেভিং লাইট তিন বছর ব্যবহার করলে সাধারণ লাইটের চেয়ে একটন কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এতে অর্থেরও সাশ্রয় হয়।

৫. কাগজ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া। কাগজের উভয় দিক ব্যবহার করা। যথাসম্ভব নিউজপ্রিন্ট কাগজ ব্যবহার করা। একাজে অন্যদের আহ্বান/উৎসাহিত করা।

৬. সম্পদের ব্যবহার যথাসম্ভব হ্রাস, পুনঃব্যবহার, পুনঃপ্রক্রিয়া করা । এ কাজে অন্যদের আহ্বান জানানো ও উৎসাহিত করা।

৭. বাসা-বাড়িতে যেখানেই সম্ভব পছন্দের গাছ লাগানো। এটি হতে পারে ঔষধি, ফলদ বা কোন ফুল/ফলের গাছ। এগুলো আমাদের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়তা করে।


৮. যথা আগাছা পরিস্কার না করা। যদি আগাছা/বন্য গাছ/ছোট জঙ্গল/ঝোপ-ঝাড়/ ছাট জলাশয় আপনার ক্ষতির কারণ না হয়, তবে এগুলো সংরক্ষণ করা। কারণ এগুলো অসংখ্য প্রাণের খাদ্য ও বাসস্থান যোগায়।

৯. কিছুই ফেলা যাবে না। ঘরে রোজাকার কাজে ব্যবহৃত পুরনো বাতিল দ্রব্য ফেলে না দিয়ে তা কোথাও জমা রাখা এবং সম্ভব হলে পুনঃ ব্যবহার করা অথবা বিক্রি করা।

১০. এই মুহুর্ত থেকেই যথাসম্ভব পলিথিন ব্যাগ বর্জন করা এবং এর পরিবর্তে কাপড়, পাট বা চটের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ, কাগজের ঠোঙ্গা এবং বাঁশ ও বেতের সামগ্রী ব্যবহার করা। যা সহজেই পঁচনশীল এবং পরিবেশের কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে না।

১১. সর্বোপরি, অপচয় না করা - ভোগ কমানো, যা সত্যিকারের প্রয়োজন শুধুমাত্র তা-ই কেনা; যখনই এবং যা কিছু সম্ভব, তা-ই পুনঃব্যবহার করা, পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা।