29 December 2010

চা পাখি

এত কিছু থাকতে চা পাখি নিয়ে লেখবার একটা কারণ আছে। এবছর অনুসন্ধিৎসু চক্র শীতবস্ত্র বিতরণ করে দিনাজপুর জেলার বিরামপুর থানার রতনপুর গ্রামে একটা আদিবাসী এলাকায়। তবে দিনাজপুর যাবার আগে থেকেই চক্রের সদস্যদের মধ্যে একটা জিনিস নিয়ে বেশ শোরগোল ওঠে, আর তা হল চা পাখি।
ব্যাপারটা এরকম যে দিনাজপুরে চা পাখি খেতে পাওয়া যায়। মানে "ফ্রাইড চা পাখি"। শীতের পাখিই হোক আর অতিথি পাখিই বলা হোক খাওয়ার সুযোগ পেলে সেটাকে হাতছাড়া করা উচিত নয়। তাই অ.চক্রের একাংশ সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে। আমি সেই দলের একজন। চা পাখি খেতে কেমন বা খাবার পরে কি হয়, সেটা বলতে চাচ্ছি না। তবে চা পাখি নিয়ে লেখাটি অ.চক্রের দুজনকে উৎসর্গ করতে চাচ্ছি। প্রথমজন, যিনি চা পাখি খেতে বলেছিলেন আর দ্বিতীয়জন, যিনি অনেক কষ্ট করে আমাদের চা পাখি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।

চা পাখি

17 December 2010

বাবুই এর বাসা

কয়েকদিন আগে কুমিল্লা থেকে ঘুরে আসলাম। কুমিল্লা ময়নামতি বোদ্ধ বিহার যা শালবন বিহার নামে পরিচিত। সেখানে ঢুকতেই প্রথম যেটা চোখে পড়লো তা হলো একটা বিশাল তাল গাছ, আর তাতে ঝুলে থাকা অনেকগুলো বাবুইয়ের বাসা। সাথে একটা ডিজিটাল ক্যামেরা ছিল তাই আর দেরি না করে কয়েকটা ছবি তুলে ফেললাম।
তাল গাছে বাবুইয়ের বাসা
ছবিগুলো Sony-DSC W320 দিয়ে তোলা

10 December 2010

বাবুই

বাবুই(Weaver Bird) আমাদের দেশের একটি অতি পরিচিত পাখি। এটি সাধারণতঃ দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানে দেখা যায়। ৩ প্রজাতির বাবুই আমাদের দেশে বেশী দেখা যায়। এরা হলঃ

১. দেশি বাবুই (Ploceus philippinus) ;
২. দাগি বাবুই (Ploceus manyar) ;
৩. বাংলা বাবুই (Ploceus bengalensis) ;

07 October 2010

দোয়েল -বাংলাদেশের জাতীয় পাখি

দোয়েল
দোয়েল মেরুদন্ডী প্রাণিদের মধ্যে প্যাছেরিফরম বর্গের অন্তর্গত একটি পাখি। ছোট পাখীদের মধ্যে দোয়েল পাখি অন্যতম। নানা রকম সুরে ডাকাডাকির জন্য দোয়েল সুপরিচিত। অস্থির এই পাখীরা সর্বদা গাছের ডালে বা মাটিতে লাফিয়ে বেড়ায়। কীট পতঙ্গ, ছোট ছোট শুঁও পোকা এদের প্রধান খাদ্য। এরা সারাদিন খাবারের খোঁজে ডাল থেকে ডালে নেচে বেড়ায়। কখনো কখনো সন্ধ্যার আগে আগে এরা খাবারের খোঁজে বের হয়। পুরুষ দোয়েল স্ত্রী দোয়েলকে আকৃষ্ট করার জন্য মিষ্টি সুরে ডাকাডাকি করে। তবে স্ত্রী দোয়েলও পুরুষ দোয়েলের উপস্থিতিতে ডাকতে পারে। এটি বাংলাদেশের জাতীয় পাখি।

14 August 2010

মেছো বাঘ

মেছো বাঘ, স্থানীয়ভাবে এর নাম গো-বাঘা। একসময় দেশজুড়েই ছিল এদের বিচরণ। তবে এখন প্রাকৃতিক বন বাদে অন্যত্র মেছো বাঘ মহা বিপন্ন।
ইংরেজি নাম Fishing cat. বৈজ্ঞানিক নাম Felis viverrina. লেজ বাদে শরীরের মাপ ৭০-৮০ সেন্টিমিটার। লেজের মাপ ৬০-৬৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১২-১৫ কেজি।

13 August 2010

প্রাণবৈচিত্র্য (Biodiversity)

কেমন হতো, যদি সারা পৃথিবী জুড়ে থাকতো কেবল এক ধরনের গাছ, সাগরে মহাসাগরে এক ধরনের মাছ, বনভূমি জুড়ে এক ধরনের প্রাণী বা আকাশে উড়ে বেড়াতো কেবল এক ধরনের পাখি? এই পৃথিবী কি তখন এতো ভাল লাগতো আমাদের? কেবল ভাল লাগাই নয়। বেঁচে থাকাও কি তখন সহজ হতো? সব খাবার কি একই গাছ বা মাছ থেকে পাওয়া যেতো? খাবার যোগানের গাছগুলোই কি টিকতে পারতো কেবলই যন্ত্রের মত একই ধরনের চারপাশের ওপর নির্ভর করে? কোনোটাই হতো না। বিচিত্র গাছ, বিচিত্র প্রাণী, বিভিন্ন এলাকায় বিচিত্র পরিবেশ আছে বলেই পৃথিবী এতো সুন্দর, রঙিন, বৈচিত্র্যময়! আর, এতো সম্ভবনা !


উন্নয়ন ও প্রাণবৈচিত্র্য

প্রচলিত ধারার উন্নয়ন ভাবনায়, পরিবেশের কথা কম ভাবা হয়। আমাদেরকে শেখানো হয়, প্রকৃতির ওপর নির্ভর করাটা পশ্চাৎপদতার লক্ষ্মণ। আধুনিক কৃষি বলতে আমাদের সামনে যে চিত্র তুলে ধরা হয়, তা হলো, গবেষণাগারে তৈরি বীজ, রাসায়নিক সার, রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করে, পাম্প দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানি তুলে কৃত্রিম সেচ দিয়ে ফসল উৎপাদন।


প্রাণবৈচিত্র্য কেন হুমকির সম্মুখীন ?

পৃথিবীর বিভিন্ন উদ্ভিদ, প্রাণী, অনুজীব ও তাদের চারপাশের পরিবেশ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল; তাই প্রাণবৈচিত্র্যের যে কোন একটি প্রজাতির বা পরিবেশের বিলুপ্তির সাথে সাথে ঐ প্রজাতি/পরিবেশের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অন্যান্য প্রাণও বিলীন হয়ে যায়।উদাহরণস্বরূপ, কোন এলাকার সমস্ত বট গাছ যদি কেটে ফেলা হয়, তাহলে ঐ বট গাছগুলো যেসমস্ত বাদুড়, চিল, শকুন, কাঠবিড়ালী, গেছো ব্যাঙ ও অন্যান্য প্রাণীকে খাদ্য বা আশ্রয় যোগাতো, তারাও বিপন্ন হয়ে পড়ে। অনুরূপভাবে, যদি কোন প্রজাতির পোকা বা পাখি বিলুপ্ত হয়, তাহলে তারা যেসমস্ত উদ্ভিদের পরাগায়ন বা বীজের বিস্তার ঘটাতো, অথবা তাদেরকে খেয়ে যেসব প্রাণী বাঁচতো, সেসব উদ্ভিদ ও প্রাণী-ও বিপন্ন হয়। আবার কোন বন ধবংস হলে বা কোন জলাশয় দূষিত বা ভরাট হয়ে গেলে ঐ বন বা জলাশয়ের ওপর নির্ভরশীল সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণী-ই বিলুপ্ত বা বিপন্ন হয়।

বিভিন্ন প্রাণীর আবাসভূমি ধ্বংস, আগ্রাসী প্রজাতির উদ্ভব, দূষণ এবং ‘‘পরিবেশ-বিমুখ’’ কৃষিকাজের দরুন পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্য প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য যোগানোর নামে “সবুজ বিপ্লব” বিভিন্ন দেশে স্থানীয় বহু জাতের ধানকে বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে; যদিও পৃথিবীতে আজও ১০০ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত। বিগত ৫০ বছরে ভারতের কৃষকেরা ৩০,০০০ জাতের ধানের চাষ করতেন। অথচ “সবুজ বিপ্লব” প্রবর্তনের ১৫ বছরের মাথায় দেখা গেল, ভারতের মোট ধান উৎপাদনের ৭৫%-ই আসছে ১০টি জাতের তথাকথিত উচ্চফলনশীল (উফশী) ধান থেকে। “সবুজ বিপ্লব”-এর এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ রাসায়নিক কীটনাশক। বাংলাদেশে এর ফল মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৮ মার্চ ২০১০ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজশাহীর বাগমারায় ক্ষেতে মৌমাছি না আসায় পেঁয়াজের পরাগায়ন হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে চাষীরা মৌমাছি ভাড়া করে আনছেন। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলিম উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, “নির্বিচারে কীটনাশক ছিটানোর কারণেই উপকারী মাছিগুলো মারা যাচ্ছে আর ক্ষতিকারক মাছিগুলোর টিকে থাকার ক্ষমতা বাড়ছে।”

শিল্প কারখানার দূষণ বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। শিল্প কারখানার মালিকেরা আইন অমান্য করে শিল্প কারখানার বর্জ্য নির্বিচারে খাল-বিল-নদী-সমুদ্রে ফেলছেন। ফলে মারা যাচ্ছে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী, সেই সাথে জলজ উদ্ভিদ। বর্তমানে বাংলাদেশের ৫৪ প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে আছে। শিল্প কারখানার দূষণ ও কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার-কীটনাশকের ব্যবহার এর অন্যতম প্রধান কারণ।

মুনাফার জন্য, রকমারি ভোগ্যপণ্য দিয়ে জীবনকে সাজানোর জন্য শিল্প কারখানা স্থাপন করতে গিয়ে পৃথিবীব্যাপী বন ধবংস করা হচ্ছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনের অর্ধেকই ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ আমাদের সবারই, বিশেষত আমরা যারা বেশি ভোগ করার সুযোগ পাই, তাদের ভেবে দেখা উচিত - কোন কোন পণ্যগুলো ব্যবহার না করলেও চলে।

বিদেশী গাছ: কেন লাগানো উচিত নয়?

কোন এলাকায় কী ধরনের গাছ জন্মাবে তা নির্ভর করে সে এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন অজৈব উপাদান যেমন - মাটি, পানি, জলবায়ু ইত্যাদির ওপর। আর, কোন এলাকায় কী ধরনের প্রাণী বাস করবে তা নির্ভর করে সেখানকার পরিবেশের অজৈব উপাদান ও সেই সাথে সেখানকার উদ্ভিদের ওপর। এ কারণেই বিদেশী গাছ দেশী প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য সহায়ক নয়। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ার ইউক্যালিপটাস গাছ অস্ট্রেলিয়ার প্রাণীকূলের (কীটপতঙ্গ, পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর) জন্য উপযুক্ত; কিন্তু বাংলাদেশের প্রাণীকূলকে তা খাদ্য ও আশ্রয় যোগাতে পারে না। তাই দেশী গাছের বদলে বিদেশী গাছ দিয়ে কোন এলাকা ছেয়ে ফেললে, সে এলাকার প্রাণীকূলের খাদ্যের উৎস ও আবাস ধ্বংস হয়, পরিণামে তারা সেখান থেকে বিলুপ্ত হয়। এ বিষয়টিকে উপেক্ষা করে, সামপ্রতিক কালে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বনায়নের নামে বিভিন্ন বিদেশী গাছ, যেমন - ইউক্যালিপটাস, একাশিয়া, মেহগনি, শিশু ইত্যাদি লাগানো হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রাণবৈচিত্র্য ব্যাপক হ্রাসের এটিও অন্যতম কারণ। বনায়নের নামে প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংসের এ ধরনের উদ্যোগ অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।

আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য বর্ষ ২০১০

পৃথিবীর ২০০টি দেশের প্রতিনিধি ২০০২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২০১০ সালকে ‘‘আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য বর্ষ’’ হিসেবে ঘোষণা করেন। সভায় লক্ষ্য স্থির করা হয়, ২০১০ সাল পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রাণবৈচিত্র্য ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে। এ বছর অক্টোবর মাসে প্রাণবৈচিত্র্য সনদের একটি আন্তর্জাতিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে জাপানে। এ ক্ষেত্রে উন্নতি কতোটা হয়েছে, লক্ষ্য পূরণে কতোটা সফল হওয়া গেছে, তা এই বৈঠকে পরিমাপ করা হবে। জাতিসংঘের মতে, প্রাণবৈচিত্র্য বর্ষ পালনের যে সারকথা দুনিয়ার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, তা হলো:

১. মানুষ ও পরিবেশের মান রক্ষায় প্রাণবৈচিত্র্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২. বর্তমান বিশ্বে প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংসের মাত্রা আশংকাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই
অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।
৩. অনেক সাফল্যের উদাহরণ আছে। তাই সাথে করে এগিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশের প্রাণবৈচিত্র্য

আমাদের বাংলাদেশ প্রাণবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এক জনপদ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এপ্রিল ২০০৯ বুলেটিনের তথ্য মতে, বাংলাদেশের নদী অঞ্চলের আয়তন ৮২৩৬ বর্গ কিলোমিটার (মোট আয়তনের ৭.৫%) ও বনাঞ্চলের আয়তন ১৯৭০ বর্গ কিলোমিটার (মোট আয়তনের ১৮%)। অবশ্য বেসরকারী পরিসংখ্যান মতে বাংলাদেশের বনভূমি মোট আয়তনের ৮-৯% বা আরও কম। আইইউসিএন ২০০২ সালে বাংলাদেশকে ২৫টি জৈব-বাস্তুসংস্থান এলাকায় ভাগ করেছে। জানুয়ারি ২০১০-এ প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকারের Forth National Report to the Convention on Biological Diversity - এ বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪৭০ প্রজাতির ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া, ১৯৮৮-রও অধিক প্রজাতির শৈবাল, ২৭৫ প্রজাতির ছত্রাক, ২৪৮ প্রজাতির ব্রায়োফাইট (মস এর অন্তর্গত), ১৯৫ প্রজাতির টেরিডোফাইট (ফার্ন এর অন্তর্গত), ৭ প্রজাতির নগ্নবীজী উদ্ভিদ ও ৩৬১১ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ চিহ্নিত করা গেছে উক্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১২১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৬৫০ প্রজাতির পাখি, ১৫৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩৪ প্রজাতির উভচর, ৬৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মাছ এবং ৬২০০-র অধিক প্রজাতির অমেরুদন্ডী প্রাণী রয়েছে। বাংলাদেশের মত ছোট একটি দেশে এতো প্রজাতির উপস্থিতি-ই বলে দেয়, প্রাকৃতিক সম্পদে তা কতোটা সমৃদ্ধ! কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রজাতিই সংখ্যার দিক থেকে মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

চিরচেনা প্রাণীগুলো কি হারিয়ে যাবে ?

বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ১০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩০ প্রজাতির পাখি ও ১ প্রজাতির সরীসৃপ। আমাদের ভূখন্ড থেকে হারিয়ে গেছে গন্ডার, বুনো মোষ, নীলগাই, ডিম-খেকো সাপ, গোলাপী শির হাঁস, কালো হাঁস, রাজশকুন ইত্যাদি। বর্তমানে হুমকির মুখে আছে ৪০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৪১ প্রজাতির পাখি, ৫৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর ও ৫৪ প্রজাতির মাছ



পরিবারপ্রাণী
স্তন্যপায়ীরয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, এশিয়ান হাতি, উল্লুক, খেঁকশিয়াল, বনবিড়াল, শুশুক, বড় বেজি, খাটাস, বাঘডাস, শজারু
পাখিকোকিল, হুতুম পেঁচা, লাল মাছরাঙা, রাজধনেশ, পাহাড়ি নীলকন্ঠ, পাহাড়ি ঘুঘু, হরিয়াল, রঙিলা বক, হাড়গিলা
সরীসৃপলোনা পানির কুমির, গোলবাহার অজগর, ঘড়িয়াল, বোস্তামী কাছিম, তক্ষক,রক্তচোষা, সোনা গুইল, লাউডগা সাপ, কালনাগিনী সাপ, রাজগোখরা সাপ, চন্দ্রবোড়া সাপ, লাল ঢোঁড়া সাপ
উভচরপটকা ব্যাঙ, সবুজ ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, পানা ব্যাঙ, লাল চীনা ব্যাঙ
মাছচিতল, সরপুঁটি, তিতপুঁটি, টেংরা, গাঙ মাগুর, ফলি, তারা বাইন, কালিবাউস, আইড়


এই চিরচেনা প্রাণীগুলোকে কি হারিয়ে যেতে দিবো আমরা ?

25 June 2010

বিপন্ন বাংলা


বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মৃত্যু হয়েছে এই বন্য হাতিটির চট্টগ্রামের সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ছোট হাতিয়ার পাহাড়ি এলাকায় (২৩ জুন,২০১০) বুধবার রাতে হাতিটি মারা যায় বুধবার রাতে হাতির একটি পাল ছোট হাতিয়া এলাকায় লোকালয়ে হানা দেয় পরে গ্রামের লোকজন মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করে একপর্যায়ে হাতির পালটি আবার পাহাড়ের দিকে চলে যায়তবে এ সময় ছোট হাতিয়া এলাকায় একটি সেচপাম্পে নেওয়া বৈদ্যুতিক তারের খুঁটির সঙ্গে ঝুলন্ত ছেঁড়া তারে জড়িয়ে একটি হাতিটির মৃত্যু হয় ছবিটি তোলার সময় দেখা যায়, দুর্বৃত্তরা মৃত হাতির পায়ের নখগুলো উপড়ে নিয়ে গেছে

ছবি : মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম

21 June 2010

একজন হাজারী, কয়েকটি বাঘ এবং কিছু কথা

গত ২৮ মে, ২০১০ (শুক্রবার) “দৈনিক আমাদের সময়” পত্রিকায় জয়নাল হাজারীর একটি লেখা ছাপানো হয় যার শিরোনাম ছিল “বাঘ রক্ষা নয়, ধ্বংস করব”। শিরোনামে প্রবন্ধটির যে সারমর্ম প্রকাশ পাচ্ছে, প্রবন্ধের ভেতরে ঠিক সে ভাবটিই প্রকাশ করেছেন জনাব জয়নাল হাজারী। প্রবন্ধের কিছুটা অংশ তুলে ধরলামঃ-

“.................... বাঘ সবচেয়ে সুন্দর প্রাণী হরিণ খায়, মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় প্রাণী গরু, মহিষ, ছাগলসহ সবই মেরে খেয়ে ফেলে। .................... বাঁচিয়ে রেখে নয়, বরং সব বাঘ মেরে ফেলে ওদের চামড়া দিয়ে জুতা তেরি করা হোক। ওদের চামড়া ড্রয়িংরুমে সাজিয়ে রাখা হোক। ....................আমি বাঘ রক্ষার বিরুদ্ধে শুধু সাধারণ অবস্থান নয়, এর বিরুদ্ধে সর্বত্র আন্দোলন গড়ে তুলব।”

বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে যে বাঘরক্ষা প্রকল্প হাতে নিচ্ছে এবং বিশ্ব ব্যাংক তাতে অর্থ সহায়তা দেবে এই প্রেক্ষিতে এই প্রবন্ধটি লেখা হয়।

প্রকাশিত এই প্রবন্ধটি যে, প্রাবন্ধিকের সাংঘাতিক নির্বুদ্ধিতা, ঘোরতর অজ্ঞতা, অসচেতনা, এবং আমাদের দেশের এক অন্ধকার ভবিষ্যতের উজ্জল নিদের্শক তা যে কোন স্বল্পশিক্ষিত (হয়ত, অশিক্ষিত) ব্যক্তিরও বোঝার কথা, বর্তমানে ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণীর যে কোন ছাত্রছাত্রী খুব পরিস্কারভাবে এটা জানে যে, পরিবেশের প্রতিটি প্রাণীর, প্রতিটি উদ্ভিদের প্রতিটি প্রজাতি একটি বৃহৎ খাদ্য শৃঙ্খল (Food Chain) এর অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই খাদ্য শৃঙ্খল প্রতিটি জীবের (উদ্ভিদ ও প্রাণী) ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন একটি প্রজাতির বিলোপসাধনে ঐ অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য অনেক পরিবর্তন আনবে যার দ্বারা ঐ অঞ্চলের মনুষ্য সম্প্রদায়ের ক্ষতিও হবে ব্যাপক, এমনকি ঐ অঞ্চল মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হওয়া মোটেও বিচিত্র নয়। হরিণ আছে বলেই বাঘ আছে, বাঘের অনুপস্থিতিতে সুন্দরবনে হরিণ এবং তৎসংশ্লিষ্ট প্রাণীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে যা সুন্দরবনের গোটা বাস্তুতন্ত্রকেই বিপর্যয় করে তুলবে। মনুষ্যসৃষ্ঠ বিভিন্ন কারণে যখন বনাঞ্চলে বাঘ তার খাদ্য আহরণে ব্যর্থ হয় কেবল তখনই বাঘ লোকালয়ে আসতে বাধ্য। অর্থাৎ বাঘের লোকালয়ে আগমনের পেছনে মূল প্রভাবক মানুষ। ঐ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ অথবা অন্য কোন শক্তি যা খাদ্য শৃঙ্খল নষ্ট করছে। বংলাদেশে মূলত শেষোক্ত কারণটিই বেশি সক্রিয়। বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সরকারের উদাসীনতাও অনেক বড় কারণ। এটি আরও বড় সত্য যে, যেসব বাঘ খাদ্য অন্বেষণে লোকালয়ে এসে পড়ে, তাদের অনেকেরই আর বনে ফেরা হয় না। পরদিন পত্রিকার শেষ পাতায় কোন এক অঞ্চলে গ্রামবাসীর হাতে কোন এক বাঘের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। হয়ত জয়নাল হাজারীদের ইচ্ছা পূরণে সেই হতভাগ্য বাঘদের চামড়া তাদের বৈচিত্র্যখানার দেয়ালে ঝোলানো হয়, যা পক্ষান্তরে সে গৃহস্থের রুচিহীনতার এক উজ্জ্বল প্রমান। লক্ষ কোটি প্রজাতির বাসস্থান এই পৃথিবীর জন্য হুমকি যদি কোন প্রজাতি হয়ে থাকে তবে তা মানুষ। (নিন্দুকেরা বলে থাকে, এই প্রজাতিটির কিছু সদস্যকে পৃথিবী থেকে বিলোপ সাধনে প্রাবন্ধিকের একটি বড় ভূমিকা আছে।)

বলবার অপেক্ষা রাখে না যে,“আমাদের সময়” দেশের একটি বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা এবং জনাব জয়নাল হাজারীও এদেশে অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তিত্ব, তার কারণ যাই হোক। একটি দেশের এত প্রচারিত একটি দৈনিকে যখন এতটা উদ্ভট, হাস্যকর প্রবন্ধ ছাপায় তখন তা শুধু ঐ পত্রিকা বা প্রাবন্ধিকের নয়, বরং পুরো দেশের মনস্কতা ও বিজ্ঞানচর্চার প্রতি একটা মানহানীকর বিদ্রুপ করে। ব্যক্তিগতভাবে অমি মনে করি,“ আমাদের সময়” কর্তৃপক্ষ সেটা জানেন।

বর্তমান বিশ্বে আর দশটা প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মতো “তথ্য” একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। এবং দেশের পুরো মিডিয়া (সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল ইত্যাদি) বিভিন্নভাবে তা জনগণের কাছে উপস্থাপন করে। তথ্য পেয়ে যেখানে মানুষের সচেতন হবার কথা, সেখানে তা না হয়ে সম্পূর্ণ উল্টোটাই হচ্ছে। পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যের নূন্যতম জ্ঞান ছাড়াই একজন জয়নাল হাজারী “দৈনিক হাজারিকা” ও “সাপ্তাহিক হাজারিকা” নামের দুটি পত্রিকার সম্পাদক পদে নিজেকে অধিষ্ঠত করেন। কেবল অর্থ ও ক্ষমতার জোরে শেষোক্ত পত্রিকাটি “দৈনিক আমাদের সময়” এর সাথে সপ্তাহে একদিন দেয়া হয়। সেই পত্রিকার সংবাদ ও সংবাদ লেখবার কায়দা কানুনও অনেকটাই অদ্ভুদ। তবে কি আমরা, পাঠকরা, ধরে নেব “আমাদের সময়” এর কোন ফান ম্যাগাজিন নেই বলে, এটি তারই বিকল্প ? যদি তাই হয়, তবে পাঠকের কাছে সে সত্য প্রকাশ করা উচিৎ, কেন মিছেমিছি আমরা বিভ্রান্ত হব?

জনাব জয়নাল হাজারী এমন কেন করেছেন জানি না, হয়ত বাঘের প্রতি যুক্তিহীন ক্রোধের বর্শবর্তী হয়ে, অথবা নিজেকে কোন ভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করে আলোচনার কেন্দ্রে আসতে। যদি কারণ প্রথমটি হয়, তবে শুনুন অতীত ও সাম্প্রতিক ইতিহাস বলে বিশ্ব ব্যংকের অর্থায়নে তৃতীয় বিশ্বের প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগের পরিণিতিই বড় নির্মম। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আবার হলে আপনার চক্ষুশূল বাঘদের সংখ্যাবৃদ্ধি নয়, বরং উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবার কথা। আর যদি যে কোনভাবে হোক সবার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করা তার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে পত্রিকা সম্পাদকের এ সুযোগ দেয়া উচিৎ হয়নি। পাঠকের প্রতি এ বড় অবিচার।

এটা নিশ্চিত যে, একদিন জনগণ সচেতন হবেই, নিজের সঠিক তথ্যের অধিকার তারা নিশ্চিত করবে, যেদিন এদেশে পরিকল্পিত কোন তথ্য বিভ্রান্তি থাকবে না, থাকবে না পরিবেশে ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার নামে সাম্রাজ্যবাদী শঠতা। দেশ আবার হয়ে উঠবে ধনধান্য পুষ্পেভরা এবং নানা প্রজাতির মিলনমেলা। হয়ত সেদিনের আর বেশি দেরি নেই।


মাহির দায়ান আমিন
অনুসন্ধিৎসু চক্র, মিরপুর শাখা

23 May 2010

প্রাণবৈচিত্র্য: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ



বিদেশী গাছে আমাদের দেশী প্রাণী বাঁচবে কী করে?’ ২২ মে আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্র আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এমেরিটাস কাজী জাকের হোসেন। ‘প্রাণবৈচিত্র্য: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ তৌহিদুল ইসলাম এবং ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট, বাংলাদেশের সুন্দরবন টাইগার প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার এডাম বারলো ও ক্রিস্টিনা গ্রীনউড।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি সেমিনার কক্ষে উক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় ড. কাজী জাকের হোসেন বলেন, একটি গাছের উপর নির্ভর করে ১০ ধরনের প্রাণী বেঁচে থাকে। তিনি বলেন, একাশিয়া, ইউক্যালিপটাস, মেহগনি ইত্যাদি বিদেশী গাছ বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, এগুলোর উপর নির্ভর করে আমাদের দেশী প্রাণীসমূহ বাঁচতে পারেনা। ড. হোসেন আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মাত্র ৮-৯% বনভূমি আছে এবং এ বনভূমির ৮০%-ই মেহগনি, সেগুন, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদির মনোকালচার ফরেস্ট। এসব মনোকালচার ফরেস্টে কেবল এক ধরনের গাছ লাগানো হয়, অন্য সমস্ত প্রজাতির গাছ ধ্বংস করা হয়। তদুপরি, বিদেশী গাছ হওয়ার দরুন এগুলো আমাদের দেশী প্রাণীর জন্য খাদ্যের যোগান দিতে পারেনা। এভাবে বিদেশী গাছ-নির্ভর মনোকালচার ফরেস্ট বাংলাদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী তথা বাংলাদেশের প্রাণবৈচিত্র্যেকে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করেছে। ড. হোসেন আরও বলেন, আমাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরায় ফিরে পাওয়া সম্ভব; এটি কোন অসাধ্য কাজ নয়। কোন একটি এলাকার পরিবেশকে আমরা যদি কোনভাবে স্পর্শ না করে ফেলে রাখি, তবে ধীরে ধীরে তা প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে পায়।
সুন্দরবন টাইগার প্রজেক্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এডাম বার্লো বলেন, বাঘের জীবনবৈচিত্র্য প্রাণবৈচিত্র্য এবং তার গত শতকের চেয়ে এই শতকে বাঘের পরিমাণ প্রায় সিংহভাগ হ্রাস পেয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশের সুন্দরবনের বাঘ ভারতের বা নেপালের বাঘের তুলনায় অনেক ছোট। তার সম্ভাব্য কারণ, বাংলাদেশে বাঘের জন্য যে শিকার পাওয়া যায়, অর্থাৎ চিত্রা হরিণ আকারে ছোট। অতএব, আমরা যদি ভাবি সুন্দরবনের বাঘ শেষ হয়ে গেলে অন্য জায়গা থেকে বাঘ এনে ছাড়া যাবে - সেটা ভুল হবে। এটা সম্ভব নয়; কারণ অন্য এলাকার বাঘ সুন্দরবনে বাঁচতে পারবে না; তা অন্য পরিবেশে বাস করতে অভ্যস্থ। ড. শেখ তৌহিদুল ইসলাম বাংলাদেশে প্রাণবৈচিত্র্য হ্রাসের উপর তার গবেষণালদ্ধ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য ২০০২ সালে পৃথিবীর ২০০ টি দেশের প্রতিনিধি জাতিসংঘের সাধারণ সভায় এক সিদ্ধান্তে ২০১০ সালকে আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য বর্ষ হিসেবে ঘোষনা করে। আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য বর্ষ ২০১০ উপলক্ষে দেশের বৃহত্তম বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্র যে বছর-ব্যাপী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, তার অংশ হিসেবে চক্র এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

04 May 2010

লুইজিয়ানা উপকূল - পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্য নাম

যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের উপকূলের কাছে মেক্সিকো উপসাগরে ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের (বিপি) ইজারাধীন ডিপওয়াটার হরাইজন নামের প্লাটফর্মে ২০ এপ্রিল বড় ধরনের বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এরপর ২২ এপ্রিল একপর্যায়ে জ্বলন্ত প্লাটফর্মটি ডুবে যায়। ওই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে দৈনিক তিন লাখ ৩৬ হাজার গ্যালন তেল উত্তোলন করা হতো। বিস্ফোরণের আগে অর্ধনিমজ্জিত প্লাটফর্মটিতে সাত লাখ গ্যালন (২৬ লাখ লিটার) জ্বালানি তেল ছিল। ডুবে যাওয়া সেই তেল উত্তোলন করার প্লাটফর্ম থেকে এখন দৈনিক পাঁচ হাজার ব্যারেল (দুই লাখ ১০ হাজার গ্যালন) তেল সাগরে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশটির কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা জানান, এর আগে ওই প্লাটফর্ম থেকে দৈনিক এক হাজার ব্যারেল তেল সাগরে ছড়িয়ে পড়ছিল।

অ্যাডমিরাল ম্যারি ল্যান্ড্রি জানান(২৯ এপ্রিল,২০১০), এখন সাগরে প্রতিদিন পাঁচ হাজার ব্যারেল তেল (দুই লাখ ১০ হাজার গ্যালন) ছড়িয়ে পড়ছে। প্লাটফর্মটিতে তৃতীয় আরেকটি ছিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। এসব ছিদ্র দিয়ে সাগরে অনবরত চুয়ে পড়ছে তেল। ছিদ্রগুলো বন্ধ করতে রোবট ডুবোজাহাজ দিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তা সফল হচ্ছে না। নিঃসরণ অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন সাগরের বিস্তর এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়ছে। শেষ খবর অনুযায়ী প্রায় ৭৪ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তেল ছড়িয়েছে।

কানাডার তেলকূপ অগ্নিনির্বাপক কম্পানি 'সেফটি বস'র প্রধান মাইক মিলার বলছেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিতে পারে। কোস্টগার্ডের তথ্য অনুযায়ী, নিঃসরণ বন্ধ করা না গেলে আগামী দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এক কোটি ১০ লাখ গ্যালন তেল সাগরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা ১৯৮৯ সালের আলাস্কায় ইক্সন ভালদেজ তেল বিপর্যয়কেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

পরিবেশ রক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে এর আগে কোস্টগার্ড তেল ছড়িয়ে পড়া সাগরের কিছু অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়। কর্মকর্তারা বলছেন, মিসিসিপি নদীর পূর্ব দিকে তেল ছড়িয়ে পড়া সাগরের পৃষ্ঠে ৫০ কিলোমিটার এলাকায় 'নিয়ন্ত্রিত আগুন' ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে মাইক মিলার এ পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদি নয় বলে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, আসল বিষয় হচ্ছে, তেল ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে হবে।

পরিবেশবিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, সাগরে তেল ছড়িয়ে পড়ায় এর প্রভাবে উপকূলের আশপাশের বিভিন্ন প্রাণী বিষাক্ত গ্যাসের প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।


লুইজিয়ানার গভর্নর ববি জিন্দাল পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারকে জরুরি সহায়তা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

29 April 2010

বয়সী কিছু বটবৃক্ষের কথা

মল্লিকপুরের বিশ্ব বটগাছ [ঝিনাইদ]

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুইতলা মল্লিকপুর গ্রামের বটগাছটি যেন দিগন্ত ছুঁতে চায়। কালীগঞ্জ সদর থেকে পাকা রাস্তা মল্লিকপুর ছুঁয়েছে। ছয় কিলোমিটার গেলে চোখে পড়ে সবুজের পাহাড়। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে বিশ্ব বটগাছ। গাছটির বয়স কমপক্ষে ৩০০ বছর। বটগাছের পাশেই ছোট্ট বাজার। এই গাছের নিচে একসময় কুমারপল্লী ছিল।একসময় এখানে একটি কুয়া ছিল। এই কুয়ার মধ্যে গাছটি জন্মায়। বর্তমানে ৪ হেক্টর জায়গাজুড়ে গাছটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। একসময় গাছটির দুই হাজার ঝুরি ছিল। এখন কমে কয়েক শ হয়েছে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এর নিচে পূজা হয়। বন বিভাগের একজন কর্মী বিশ্ব বটগাছের পাহারাদার। এখানে জেলা পরিষদের একটি ডাকবাংলো রয়েছে।
(তথ্যসূত্র : ফখরে আলম, যশোর)

মিরপুরের অচিন বৃক্ষ

গাছটিকে সবাই বলে অচিন বৃক্ষ। অথচ যে কেউ দেখে বলতে পারবে, এটি একটি বটগাছ। চেনা গাছটির এমন নাম কেন হলো, তার সঠিক জবাব দিতে পারেনি কেউ।গাছের নিচে একটি সিমেন্টের ফলকে গাছটির বয়স ১৬৫ বছর লেখা। উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমীরা এর সমর্থন করেননি। তাঁদের ধারণা, এর বয়স ১০০ বছর বা কিছু কমবেশি।
কাছেই থাকে কয়েকটি হিন্দু পরিবার। তারা একে দেবতা মানে। পৌষসংক্রান্তির দিন এই গাছে বুড়াবুড়ির পূজা দেওয়া হয়। গাছের গুঁড়ির মধ্যখানে বুড়ির প্রতিমা রেখে খাবার, কবুতরসহ নানা সামগ্রী উৎসর্গ করে তারা।
বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে চটবাড়ি এলাকায় তুরাগ নদের পাড়ে গাছটির অবস্থান। মিরপুর এক নম্বর থেকে রিকশাওয়ালাকে চটবাড়ি বটতলা বললে সোজা সেখানে নিয়ে যাবে।
(তথ্যসূত্র : মোহাম্মদ আসাদ)

বটতলীর বটগাছ [আলুটিলা, খাগড়াছড়ি]

জনশ্রুতি রয়েছে, যিনি এ বটবৃক্ষের তলায় বসে ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগাবেন, তিনি শতবর্ষী হয়ে যাবেন। এ আশায় বটগাছের নিচে অনেকেই কিছু সময় কাটিয়ে সুখ অনুভব করেন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, স্বাধীনতার বছরেও তারা বাপ-দাদার কাছে শুনেছেন বটগাছটি শত বছর আগের। তখন ত্রিপুরা আদিবাসীরা বটগাছটি ঘিরে পূজা অর্চনা করত। মূল বটগাছটি থেকে নেমে আসা প্রতিটি ঝুরিমূল কালের পরিক্রমায় একেকটি নতুন বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। গাছটি থেকে এলাকার নাম হয়েছে বটতলী
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার আলুটিলায় এর অবস্থান। খাগড়াছড়ি জেলা সদরে পৌঁছার ২০ কিলোমিটার আগে মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর। সেখান থেকে আরো চার কিলোমিটার সামনে ১০ নম্বর হয়ে ট্যাক্সি বা নিজস্ব যানবাহনে বটতলী যেতে সময় লাগে ১৫ মিনিট।
(তথ্যসূত্র : মুহাম্মদ আবু দাউদ, খাগড়াছড়ি)

দেবালয়টেকের বটগাছ [নরসিংদী]

নরসিংদী সদর উপজেলার সোনর গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের মাঝে দেবালয়টেকে প্রায় তিন বিঘা জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি শতবর্ষী বটগাছ। গাছটির ঝুরিমূল থেকে সৃষ্টি হয়েছে আরো ২২টি বিভিন্ন আকারের বটগাছ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছটির পরিধিও বাড়ছে।
কথিত আছে, এই গাছে দেব-দেবী থাকে। কেউ গাছের কোনো অংশ কাটলে সে মারা যায়। গাছটির মালিকদের একজন নৃপেন্দ্র পাল বলেন, বহু আগে থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের ২ তারিখে এই গাছের তলে মেলা বসে।
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে প্রথমে যেতে হবে নরসিংদীর পাঁচদোনা বাসস্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ড থেকে সোনরে পৌছতে রিকশায় সময় লাগবে ১০ মিনিট। রিকশা থেকে নেমে মেঠো পথে দুই মিনিট হাঁটলেই আপনি পৌছে যাবেন দেবালয়টেকে।
(তথ্যসূত্র : সুমন বর্মণ, নরসিংদী)

11 April 2010

আন্তজার্তিক প্রাণবৈচিত্র্য বর্ষ ২০১০

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এর (৬১/২০৩) সভায় ২০১০ সালকে আন্তজার্তিক প্রাণবৈচিত্র্য বর্ষ ঘোষণা করা হয়। খুব সাধারণভাবে প্রাণবৈচিত্র্য বলতে আমাদের চারপাশের দৃশ্য, অদৃশ্য সকল প্রাণকে বুঝায় । মানুষের জীবন ধারণের জন্য খাদ্য থেকে দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার্য প্রত্যেকটি দ্রব্যের জন্য প্রাণবৈচিত্র্যের উপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। কিন্তু ক্রমবর্ধমান পরিবেশ দূষণের কারণে পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্যের একটি বিশাল অংশ আজ হুমকির মুখে। তাই এখন উচিত আমাদের যাবতীয় পরিবেশ দূষণ বন্ধ করা কিংবা বন্ধ করার জন্য সোচ্চার হওয়া।

আমারা প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় প্রত্যেকেই কিছু না কিছু ভূমিকা রাখতে পারি। অনুসন্ধিৎসু চক্র প্রাণবৈচিত্র্য বাঁচাতে সাধারণ কিছু কাজের তালিকা করেছে। প্রাণবৈচিত্র্য বাঁচাতে আমরা যে কেউ নিচের যে কোন একটি চর্চা শুরু করতে পারি আমাদের নিজেদের জীবনে। অনেকে হয়তো বলবেন ব্যক্তিগত এই চর্চা সমাজে কতটুকু পরিবর্তন আনতে পারবে। কিন্তু আমাদের এই চর্চা যে একদিন চারদিকে বিস্তার লাভ করবে না, তা কে বলতে পারে ? তাই এখনই শুরু করতে পারেন নিচের ন্যূনতম একটি অথবা একাধিক চর্চা। নিজের চর্চার পর তা পরিবারের অন্যদের চর্চার আহ্বান জানানো।

১. প্রাণবৈচিত্র্য কি তা জানা, পরিবারের সবাইকে জানানো; প্রতিবেশীদের, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের জানানো, কর্মস্থলে জানানো; কর্মস্থলে, সংগঠনে আলোচনা করা। যত বেশি মানুষকে সম্ভব, এটা জানানোর জন্য সচেষ্ট হওয়া ।

২. পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ব্যবহারে যথাসম্ভব মিতব্যয়ী হওয়া। অন্যদের আহ্বান জানানো।

৩. ঘর থেকে বের হওয়া মাত্রই বাতি নিভিয়ে ফেলা। যখন ঘরে থাকবেন না তখন যে সব বৈদ্যুতিক যন্ত্র আপনি ব্যবহার করছেন না, তা বন্ধ রাখা। কারণ এতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়।

৪. প্রত্যেক বাসায় নূন্যতম একটি এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করা। এ কাজে প্রয়োজনে অনুসন্ধিৎসু চক্রের সাথে যোগাযোগ করুন। একটি এনার্জি সেভিং লাইট তিন বছর ব্যবহার করলে সাধারণ লাইটের চেয়ে একটন কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এতে অর্থেরও সাশ্রয় হয়।

৫. কাগজ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া। কাগজের উভয় দিক ব্যবহার করা। যথাসম্ভব নিউজপ্রিন্ট কাগজ ব্যবহার করা। একাজে অন্যদের আহ্বান/উৎসাহিত করা।

৬. সম্পদের ব্যবহার যথাসম্ভব হ্রাস, পুনঃব্যবহার, পুনঃপ্রক্রিয়া করা । এ কাজে অন্যদের আহ্বান জানানো ও উৎসাহিত করা।

৭. বাসা-বাড়িতে যেখানেই সম্ভব পছন্দের গাছ লাগানো। এটি হতে পারে ঔষধি, ফলদ বা কোন ফুল/ফলের গাছ। এগুলো আমাদের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়তা করে।


৮. যথা আগাছা পরিস্কার না করা। যদি আগাছা/বন্য গাছ/ছোট জঙ্গল/ঝোপ-ঝাড়/ ছাট জলাশয় আপনার ক্ষতির কারণ না হয়, তবে এগুলো সংরক্ষণ করা। কারণ এগুলো অসংখ্য প্রাণের খাদ্য ও বাসস্থান যোগায়।

৯. কিছুই ফেলা যাবে না। ঘরে রোজাকার কাজে ব্যবহৃত পুরনো বাতিল দ্রব্য ফেলে না দিয়ে তা কোথাও জমা রাখা এবং সম্ভব হলে পুনঃ ব্যবহার করা অথবা বিক্রি করা।

১০. এই মুহুর্ত থেকেই যথাসম্ভব পলিথিন ব্যাগ বর্জন করা এবং এর পরিবর্তে কাপড়, পাট বা চটের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ, কাগজের ঠোঙ্গা এবং বাঁশ ও বেতের সামগ্রী ব্যবহার করা। যা সহজেই পঁচনশীল এবং পরিবেশের কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে না।

১১. সর্বোপরি, অপচয় না করা - ভোগ কমানো, যা সত্যিকারের প্রয়োজন শুধুমাত্র তা-ই কেনা; যখনই এবং যা কিছু সম্ভব, তা-ই পুনঃব্যবহার করা, পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা।