14 August 2010

মেছো বাঘ

মেছো বাঘ, স্থানীয়ভাবে এর নাম গো-বাঘা। একসময় দেশজুড়েই ছিল এদের বিচরণ। তবে এখন প্রাকৃতিক বন বাদে অন্যত্র মেছো বাঘ মহা বিপন্ন।
ইংরেজি নাম Fishing cat. বৈজ্ঞানিক নাম Felis viverrina. লেজ বাদে শরীরের মাপ ৭০-৮০ সেন্টিমিটার। লেজের মাপ ৬০-৬৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১২-১৫ কেজি।



নাম মেছো বাঘ হলেও মাছ এদের মূল খাদ্য নয়। মাছ শিকারি হিসেবে দক্ষও নয় তেমন। কথিত আছে, এরা রাতে জলে লেজ ফেলে শব্দ করে এবং জলে প্রস্রাব করে। শব্দে ও প্রস্রাবের গন্ধে নাকি বড় মাছেরা খাবার ভেবে ছুটে আসে। তখন এরা মাছ ধরে ফেলে।
মেছো বাঘের খাদ্যতালিকায় আছে : ধেনো ইঁদুর, নির্বিষ সাপ, বুনো খরগোশ, পাখি, কাঁকড়া, কচ্ছপ, শিয়াল, কুকুর, বাছুর, ছাগল, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি। দক্ষ শিকারি এরা। তুখোড় লড়াকুও বটে। শরীরে শক্তি ধরে প্রচণ্ড। গাছে চড়তে ওস্তাদ। রাতে গাছে চড়ে বড় পাখিসহ ওদের ডিম-ছানা খায়। কাঠবিড়ালি, তক্ষক, এমনকি গাছখাটাশও শিকার করে। অন্য বাঘ সাধারণত শজারুকে না ঘাঁটালেও এরা শজারু শিকারে অতিশয় দক্ষ। লড়াইয়ে দেশি একজোড়া কুকুরও এদের সাথে পারবে না।
মেছো বাঘ বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। বাচ্চা পোষা যায়।


বাংলাদেশে এখনও সুন্দরবনসহ বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনে মেছো বাঘের দেখা মেলে। হাওরাঞ্চলে প্রায়ই এদের মৃত্যুসংবাদ পাওয়া যায়(অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেছো বাঘকে ‘চিতাবাঘ’ বলে এদের উল্লেখ করা হয়)। এরা আছে বাগেরহাট, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের গ্রামীণ বনগুলোয়। ফকিরহাটের বিখ্যাত উত্তরের হাওরপারজুড়েও আনাগোনা আছে এদের।
প্রাকৃতিক পরিবেশে কমে গেছে শিকার, দিন দিন কৃত্রিম ঘের করে মাছ চাষ করায় আর প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায়, দেখা দিয়েছে মেছো বাঘের খাদ্যের অভাব। ফলে তারা মাঝেমাঝে খাদ্যের সন্ধানে ঢুকে পরে লোকালয়ে। তাই প্রায়ই মারা পড়ছে ঘেরে পাতা ফাঁদ ও বিষটোপে। প্রাণবৈচিত্র্যের অমূল্য এই প্রাণীটিকে রক্ষায় এখনি আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন, তা না হলে হয়তো চিরতরেই হারিয়ে যাবে প্রাণীটি।


(সর্বশেষ ছবিটি আমিনুর রহমান এর তোলা, বাগেরহাটের ফকিরহাট থেকে, দৈনিক প্রথম আলোতে ছাপানো হয়েছিল।)

1 comment:

Bashar said...




অত্যন্ত ভাল মানের লেখা । শুধু পড়তেই মন চায় । ধন্যবাদ ।
ইংরেজি গ্রামার বাংলায় শেখার মজার ওয়েবসাইট ।