13 August 2010

প্রাণবৈচিত্র্য কেন হুমকির সম্মুখীন ?

পৃথিবীর বিভিন্ন উদ্ভিদ, প্রাণী, অনুজীব ও তাদের চারপাশের পরিবেশ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল; তাই প্রাণবৈচিত্র্যের যে কোন একটি প্রজাতির বা পরিবেশের বিলুপ্তির সাথে সাথে ঐ প্রজাতি/পরিবেশের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অন্যান্য প্রাণও বিলীন হয়ে যায়।উদাহরণস্বরূপ, কোন এলাকার সমস্ত বট গাছ যদি কেটে ফেলা হয়, তাহলে ঐ বট গাছগুলো যেসমস্ত বাদুড়, চিল, শকুন, কাঠবিড়ালী, গেছো ব্যাঙ ও অন্যান্য প্রাণীকে খাদ্য বা আশ্রয় যোগাতো, তারাও বিপন্ন হয়ে পড়ে। অনুরূপভাবে, যদি কোন প্রজাতির পোকা বা পাখি বিলুপ্ত হয়, তাহলে তারা যেসমস্ত উদ্ভিদের পরাগায়ন বা বীজের বিস্তার ঘটাতো, অথবা তাদেরকে খেয়ে যেসব প্রাণী বাঁচতো, সেসব উদ্ভিদ ও প্রাণী-ও বিপন্ন হয়। আবার কোন বন ধবংস হলে বা কোন জলাশয় দূষিত বা ভরাট হয়ে গেলে ঐ বন বা জলাশয়ের ওপর নির্ভরশীল সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণী-ই বিলুপ্ত বা বিপন্ন হয়।

বিভিন্ন প্রাণীর আবাসভূমি ধ্বংস, আগ্রাসী প্রজাতির উদ্ভব, দূষণ এবং ‘‘পরিবেশ-বিমুখ’’ কৃষিকাজের দরুন পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্য প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য যোগানোর নামে “সবুজ বিপ্লব” বিভিন্ন দেশে স্থানীয় বহু জাতের ধানকে বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে; যদিও পৃথিবীতে আজও ১০০ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত। বিগত ৫০ বছরে ভারতের কৃষকেরা ৩০,০০০ জাতের ধানের চাষ করতেন। অথচ “সবুজ বিপ্লব” প্রবর্তনের ১৫ বছরের মাথায় দেখা গেল, ভারতের মোট ধান উৎপাদনের ৭৫%-ই আসছে ১০টি জাতের তথাকথিত উচ্চফলনশীল (উফশী) ধান থেকে। “সবুজ বিপ্লব”-এর এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ রাসায়নিক কীটনাশক। বাংলাদেশে এর ফল মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৮ মার্চ ২০১০ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজশাহীর বাগমারায় ক্ষেতে মৌমাছি না আসায় পেঁয়াজের পরাগায়ন হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে চাষীরা মৌমাছি ভাড়া করে আনছেন। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলিম উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, “নির্বিচারে কীটনাশক ছিটানোর কারণেই উপকারী মাছিগুলো মারা যাচ্ছে আর ক্ষতিকারক মাছিগুলোর টিকে থাকার ক্ষমতা বাড়ছে।”

শিল্প কারখানার দূষণ বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। শিল্প কারখানার মালিকেরা আইন অমান্য করে শিল্প কারখানার বর্জ্য নির্বিচারে খাল-বিল-নদী-সমুদ্রে ফেলছেন। ফলে মারা যাচ্ছে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী, সেই সাথে জলজ উদ্ভিদ। বর্তমানে বাংলাদেশের ৫৪ প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে আছে। শিল্প কারখানার দূষণ ও কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার-কীটনাশকের ব্যবহার এর অন্যতম প্রধান কারণ।

মুনাফার জন্য, রকমারি ভোগ্যপণ্য দিয়ে জীবনকে সাজানোর জন্য শিল্প কারখানা স্থাপন করতে গিয়ে পৃথিবীব্যাপী বন ধবংস করা হচ্ছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনের অর্ধেকই ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ আমাদের সবারই, বিশেষত আমরা যারা বেশি ভোগ করার সুযোগ পাই, তাদের ভেবে দেখা উচিত - কোন কোন পণ্যগুলো ব্যবহার না করলেও চলে।

No comments: